">
জাহিদ ও রাশেদ দুই বন্ধু। দুজনই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তারা উভয়েই লেখাপড়ায় খুব ভালো। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। এক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে তারা লেখাপড়া শুরু করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে তা পাল্টে যায়। জাহিদ সংকল্প করে লেখাপড়া শেষ করে সততার সঙ্গে ব্যবসা করবে।
রাশেদ চিন্তা করে, পুলিশ কিংবা কাস্টমসে চাকরি করবে এবং বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হবে। দুজন একই সঙ্গে লেখাপড়া শেষ করে; জাহিদ ঢুকল ব্যবসায়। আর রাশেদ বিসিএস দিয়ে পুলিশ বিভাগে চাকরি নিলো। রাশেদ চাকরিতে ঢোকার অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই বিপুল টাকার মালিক হয়। টাকার নেশা তাকে পেয়ে বসে।
অবৈধ পথে টাকা কামিয়ে সে ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট ও প্লটের মালিক হয়। কাছের বন্ধুকেও সে আর পাত্তা দেয়নি। তাকে অবহেলা, অবজ্ঞা করেছে। সে ভেবেছিল, বন্ধুর সঙ্গে প্রতিযোগিতার খেলায় সে জিতে গেছে! কাজেই তার নাগাল আর কে পায়?
অপরদিকে, জাহিদ সৎভাবে ব্যবসা করে। কোনো রকম নয়-ছয় তার পছন্দ নয়। ফলে তার ব্যবসা আস্তে আস্তে আগায়।আবার কখনো থমকে যায়। হোঁচট খায়। কখনো কখনো ছিটকে পড়ার মতো অবস্থা হয় তার। তারপরও সে হাল ছাড়েনি। হতাশায় ভেঙে পড়েনি। মনোবল হারায়নি। আবার সে ঘুরে দাঁড়ানোর কঠিন চেষ্টা করেছে।
কিন্তু সে মানুষ ঠকায়নি। তার প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করে তাদেরকে নিয়মিত বেতন দিয়েছে। পদোন্নতি ও ইনক্রিমেন্ট দিয়েছে। কখনো কখনো প্রণোদনাও দিয়েছে।
জাহিদ মনে মনে ভাবে, ব্যবসার প্রতি তার আন্তরিকতা আছে। চেষ্টা আছে। নিশ্চয়ই সে একদিন বড় হবে। তার প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করে তারাও নিজের মনে করে কাজ করে। দিনে দিনে ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকে। এক পর্যায়ে জাহিদ বেশ বড় ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে। তার ভাবমূর্তিও অসম্ভব ভালো।
জাহিদের বন্ধু রাশেদ এখন কেমন আছে? হঠাৎ জাহিদ একদিন পত্রিকায় দেখে, দুর্নীতির দায়ে রাশেদ গ্রেপ্তার হয়েছে। তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। জাহিদ অবাক বিস্ময়ের বন্ধুর খবরটি পত্রিকায় দেখে। বন্ধুর জন্য তার চোখে পানি আসে।
এই গল্পটি থেকে আমরা সবাই কিছু শিক্ষা নিতে পারি। রাশেদ দ্রুত বড়লোক হতে গিয়ে অবৈধ পথ বেছে নিয়েছে। এটি ছিল একটি সহজ পথ। সে কারণেই সে বড় ধরনের বিপদে পড়েছে। সৎভাবে চাকরি করলে হয়তো বড়লোক হতে পারত না। কিন্তু সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে পারতো। আনন্দটাও দীর্ঘস্থায়ী হতো। জাহিদ কঠিন সংগ্রাম করেছে; কষ্ট করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। সঙ্গত কারণেই তার কাছে বড় হওয়ার আনন্দটা অনেক বড়।
আসলে ঘাত-প্রতিঘাত ও কষ্টের বিনিময়ে কোনো কিছু অর্জন করতে পারলে অপার আনন্দ উপভোগ করা যায়। অতি সহজে যা পাওয়া যায় তাতে তেমন কোনো আনন্দ লাভ করা যায় না। লেখাপড়া, চাকরি কিংবা ব্যবসায় যারা তর তর করে ওপরে ওঠে, তাদের ধপাস করে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে। ধীরে ধীরে চেষ্টা করে করে যারা ওপরে ওঠেন তাদের ভিত্তি অনেক মজবুত থাকে। আচমকা ঝড়ও তাদেরকে ফেলতে পারে না।
তথ্যসূত্র: কালের কন্ঠ